অনলাইন ডেস্ক ::
ঘটনাটি দশ মাস আগের। গৃহশিক্ষকের লালসার শিকার অভিজাত পরিবারের এক গৃহবধূ। এ ঘটনার ভিডিওচিত্রও ধারণ করে ওই যুবক। সেটা দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় ৬০ লাখ টাকা। এছাড়া জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয় কিছু শূন্য চেকেও। শুধু তাই নয়, ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার নাম করে বিভিন্ন সময় দাবি করে কোটি টাকা। অভিযুক্ত ওই গৃহশিক্ষকের নাম শাহ মো. মুজাহিদ। রাজধানীর একটি নামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মুজাহিদের রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতারণার ফাঁদ পাতে সে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে গত ১১ই জানুয়ারি ভাটারা থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে একটি মামলাও হয়েছে। মামলাটি করেছেন নির্যাতিতা গৃহবধূর স্বামী। তিনি জানিয়েছে, প্রথমদিকে লোক-লজ্জার ভয়ে মামলা করেননি। তবে আসামিদের অব্যাহত হুমকি প্রদান ও চাঁদা দাবিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তারা। ফলে আইনি সহযোগিতা নিতে বাধ্য হয়েছেন। এই মামলার প্রেক্ষিতে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ধর্ষণের ভিডিওসহ চাঁদা দাবির নানা আলামত জব্দ করেছে। বর্তমানে মুজাহিদ জেলহাজতে এবং মুশাহিদ জামিনে রয়েছেন। এদিকে আদালতের নির্দেশে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদে মুজাহিদ ঘটনার স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এতে আত্মসাৎকৃত ৬০ লাখ টাকা খরচের বিবরণও দিয়েছে। বিশস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, মামলাটির দীর্ঘ তদন্তে ওই দুই আসামি ছাড়াও আরো ৫ জনের সম্পৃক্ততা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও মামলায় এখনও চার্জশিট দাখিল করা হয়নি। পুলিশের গুলশান জোনের ডিসি বলছেন, মামলার তদন্ত এখনো চলছে। বাদীর কোনো বক্তব্য থাকলে তিনি লিখিতভাবে জানাতে পারেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, রাজধানীর ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অভিজাত ওই পরিবারে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার মধ্য নরপুতি (শ্রীকুটা ফকিরবাড়ি) গ্রামের হিরা মিয়ার ছেলে শাহ মো. মুজাহিদ (২৩) গত বছর ৭ই আগস্ট গৃহশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায়। সে বাদীর ছোট ২ ছেলে ও এক মেয়েকে পড়াতো। এ সুবাদে সে বিভিন্ন সময় বাদীর গাড়িও ব্যবহার করতো। এরপর গত ১লা সেপ্টেম্বর গৃহবধূর স্বামী মামলার বাদী অসুস্থ হয়ে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হন। এই সুযোগে মুজাহিদ ছেলে মেয়েদেরকে বেড়ানোর কথা বলে চালকসহ বাদীর প্রাডো গাড়ি নিয়ে ৩০০ ফিট রাস্তায় যান। রাস্তায় আরো দুজন তাদের গাড়ির গতিরোধ করলে চালক গাড়ি থামিয়ে তারা কারা জিজ্ঞেস করেন। এ সময় মুজাহিদ জানায়, তারা তার লোক। তারা বাচ্চাদেরকে চিপস কিনে দেয়। পরে তারা চালকসহ বাচ্চাদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। চালককে পিস্তল দেখিয়ে জিম্মি করে রাখে। পরে মুজাহিদ তাদের ওই অবস্থায় রেখে বাসায় ফিরে আসে। বাদীর অগোচরে কোল্ড ড্রিংসের সঙ্গে নেশা জাতীয় জিনিস মিশিয়ে তাকে খাওয়ায়ে অচেতন করে ফেলে। এ সময় তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষিতার অর্ধনগ্ন, বিবস্ত্র ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে। পরে গৃহবধূর জ্ঞান ফিরলে সেগুলো দেখিয়ে ব্ল্যাক মেইল করে। বলে, আলমারি চাবি দিতে। এ সময় ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখায়। এতে ভীত হয়ে বাদি আলমারির চাবি দিলে সেখানে রাখা ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের তিনটি, স্টান্ডার্ড চার্টার ব্যাংকের ২টি চেক এবং ৩০০ টাকার অলিখিত একটি স্ট্যাম্পে ভিকটিম গৃহবধূর স্বাক্ষর নেয়। পরে গৃহবধূ তার স্বামী হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলে ঘটনার বিস্তারিত জানান। এ ঘটনা জানার পর তিনি মুজাহিদকে ফোন করলে আরো ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। ওই চাঁদা না দিলে এসব বিবস্ত্র ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে প্রামণস্বরূপ ওই ভিডিও ও বিবস্ত্র ছবি একটি পেন ড্রাইভে করে বাদীর কাছে পাঠায়। এছাড়া মামলা করলে জীবননাশের হুমকি দেয়। প্রথমদিকে বাদী তার সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে বিষয়টি নিয়ে চুপ ছিলেন। কিন্তু ধর্ষক ও চাঁদাবাজদের অব্যাহত হুমকিতে ভাটারা থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে গত ১১ই জানুয়ারি একটি মামলা করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দুই আসামি মুজাহিদ ও মুশাহিদকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীকালে মুশাহিদ জামিনে বেরিয়ে আসে।
সূত্র জানায়, আসামি মুজাহিদকে আদালতের মাধ্যমে জেলগেটে জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বাদীর লকার হতে ৬০ লাখ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে। ভিকটিমের স্বাক্ষরিত চেক ও স্টাম্প নেয়ার কথা স্বীকার করে কখনো জুবায়েরের বাড়িতে, কখনো নিজ বাড়িতে, আবার কখনো বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে সেগুলোর রয়েছে বলে জানায়। স্বীকারোক্তি মোতাবেক একটি স্যামসাং মোবাইল, একটি ৪ জিবি মেমোরি কার্ড উদ্ধার করে মামলার আলামত জব্দ করা হয়। পরে সেগুলো সিআইডিতে পাঠানো হয়। সেগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার পর কর্মকর্তাদের মতামত নেয়া হয়। এ ঘটনায় ভিকটিম ও সাক্ষীরও জবানবন্দি নেয়া হয়। এই জবানবন্দি যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। একটি বিশস্ত সূত্র জানায়, দুই আসামি ছাড়াও তদন্তে আরো তিনজনের সম্পৃক্তার কথা ওঠে এসেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি মামলার তদন্ত করেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারবো না। ঊর্ধতন কর্মকর্তারা কথা বলবেন। গুলশান জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আশরাফুল করিম বলেন, এ ব্যাপারে ডিসি স্যার কথা বলবেন। তবে গুলশান জোনের ডিসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, মামলাটির এখনো তদন্ত চলছে। বাদীর অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, তার অভিযোগ থাকলে তিনি লিখিতভাবে জানাতে পারেন।
পাঠকের মতামত: